এন্ডোমেট্রিওসিস: মেয়েদের চেপে রাখা কষ্ট!
মাসিকের সময় অনেক নারী তলপেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। যেকোনো বয়সের নারীরাই এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। তবে, অনেকেই কারণ জানেন না। মাসের পর মাস নীরবে সহ্য করেন এই ব্যথা। সামাজিক ভয়, অজ্ঞতা, সচেতনতার অভাব, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে ব্যথার উৎস শনাক্তে বিলম্ব হয়। তত দিনে সমস্যাটি সিস্ট ও বন্ধ্যত্বের মতো জটিলতা তৈরি করে। এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণে মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা হতে পারে। বিশ্বের প্রায় ১৯ কোটি নারী এ সমস্যায় ভুগছেন। তাই মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা হলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের। তবে সন্তান নিতে বিলম্ব, জরায়ুতে ত্রুটি রয়েছে, এমন নারীরা এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
এন্ডোমেট্রিওসিস কী?
এন্ডোমেট্রিয়াম হলো জরায়ুর ভেতর দিকের আবরণ। বয়ঃসন্ধি থেকে সন্তান নেওয়া পর্যন্ত জরায়ুতে নানা পরিবর্তন ঘটে। মাসিক চক্রে এন্ডোমেট্রিয়াম টিস্যু খসে গেলে ঋতুস্রাব শুরু হয়। কিন্তু এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত নারীর জরায়ুর ভেতরের অংশ ছাড়াও এর বাইরের দিকে বিশেষত ডিম্বাশয়, গর্ভনালি, মলাশয়ের গায়ে এন্ডোমেট্রিয়ামের উপস্থিতি দেখা যায়। মাসিকের সময় এসব টিস্যু ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয়। এ কারণে তলপেটে তীব্র ব্যথা হয়। রক্তক্ষরণের ফলে ডিম্বাশয়ে রক্ত জমে সিস্ট তৈরি হয়। একে চকলেট সিস্ট বলে। দীর্ঘদিন এ সমস্যায় ভুগলে ডিম্বাশয় ও জরায়ুতে টিউমার হতে পারে।
ঝুঁকিতে যাঁরা
এন্ডোমেট্রিওসিসের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের। এ ছাড়া সন্তান হয়নি, প্রথম সন্তান নিতে বিলম্ব করেছেন, জরায়ুতে জন্মগতভাবে ত্রুটি রয়েছে কিংবা এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে, এমন নারীরা এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
এন্ডোমেট্রিওসিস শনাক্তে ল্যাপারোস্কোপি করে ক্ষত পরীক্ষা করতে হয়। পরে বায়োপসি করতে হয়। সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার আগে এন্ডোমেট্রিওসিস খুব কম দেখা যায়। তবে অনেক অল্প বয়সী মেয়েরও বেদনাদায়ক মাসিক হয়ে থাকে। শরীরের কোন অংশে এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু সৃষ্টি হয়েছে, সেটার ওপর এন্ডোমেট্রিওসিসের উপসর্গগুলো নির্ভর করে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
এন্ডোমেট্রিওসিসের উপসর্গগুলো নির্ভর করে কোন এলাকায় এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুগুলি সৃষ্টি হয়েছে তার উপর। এন্ডোমেট্রিওসিসের কিছু সাধারণ উপসর্গ নিচে উল্লেখ করা হল-
-
-
- মাসিক চক্রের সময় পেটে বা শ্রোণী অঞ্চলে প্রচন্ড ব্যথা (ডিস্মেনোরিয়া)।
- ডিসস্প্যারিউনিয়া (যৌন মিলনের সময় ব্যথা)।
- মাসিক চক্রের সময় অস্বাভাবিকভাবে প্রচুর (মেনোরেজিয়া) বা দীর্ঘকালীন (মেট্রো্রেজিয়া) রক্তপাত।
- বন্ধ্যাত্ব।
- মুত্রত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব ও মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করা।
- অবসাদ (বিশেষ করে মাসিক চক্রের সময়)।
-
চিকিৎসা পদ্ধতি
তিনটি উপায়ে এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
-
-
- ব্যথা কমানোর ওষুধ সেবন।
- হরমোন থেরাপি। এটা তলপেটের ব্যথা কমাতে, মাসিক চক্র নিয়মিত করতে ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
- অস্ত্রোপচার। এর মাধ্যমে অস্বাভাবিক এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু বাদ দেওয়া হয়। রোগীর শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে জরায়ু, ডিম্বাশয় ও ফ্যালোপাইন টিউব সার্জারি করে বাদ দেওয়া হয়।
-
করণীয় কী
এন্ডোমেট্রিওসিস পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব। নিয়মিত চিকিত্সার মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণেও রাখা যায়। এ জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিত্সকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।