মাসিক বা Menstruation হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা দ্বারা কোনো নারীর সুস্থতা নির্দেশ করে। মূলত মেয়েদের জরায়ু যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং প্রতিমাসে হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে যে রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত তরল পদার্থ বের হয়ে আসে, একে মাসিক বা ঋতুস্রাব বলে৷ যাকে নরমাল হরমোনাল প্রক্রিয়া হিসেবেই অভিহিত করা যেতে পারে।
কিন্তু সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলেই তা হয়ে যায় বিষফোঁড়ার কারণ। যেখানে বাইরের দেশগুলোতে “My Period My Pride “ স্লোগানে উদ্বুদ্ধ সেখানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা গোপনীয়তার বিষয়। যার পক্ষে আমরা বিভিন্ন যুক্তিও পোষণ করে থাকি। কিছু ধারণা প্রচলিত যার কোন বাস্তবের সাথে মিল নেই এবং এই অনাদিকাল থেকে চলে আসা প্রথাগুলোই কুসংস্কার।
- নিরামিষ খাবার গ্রহণে বাধ্য করা ; যেখানে আসলেই অনেক বেশি পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
- স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজে বাধা সৃষ্টি করা ( উপাসনা, গুরুজনদের কাছে ঘেঁষতে না দেওয়া রান্নাঘরে ঢুকতে করতে না দেওয়া) ; যেখানে আসলে গুরুজনদের সাহচর্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন হয়।
- এক সম্প্রদায়ের মানুষদের দেখা যায় তারা এই গুরুত্বপূর্ণ সময়েই মেয়েদের পানিতে চুবিয়ে রাখে যা কুসংস্কার বাদে আর কিছুই নয়। কারন এর ফলে তার মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উভয়েরই ক্ষতি হয়।
- তাদের খুব ভোরে গোসল(স্নান) করতে বাধ্য করা হয় এবং সাথে করে অনেকগুলো বিধিনিষেধও জুড়ে দেওয়া হয় যা নিতান্তই অমূলক ও যুক্তিহীন।
- রোজা রাখতে পারবে না জেনেও তাকে লোকলজ্জার ভয়ে সাহরী, ইফতার দুইই সম্পন্ন করতে হয়। এতে করে পুষ্টিহীনতায় ভোগে।
এভাবে করে অধিকাংশ মেয়ে তথা নারীরাই আজ হুমকির সম্মুখীন। মিথ্যে অভিনয় দ্বারা লুকিয়ে রাখার জন্য কত হাজারো রোগ যে বাসা বাধে যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো সিস্ট, জরায়ুর ক্যান্সার ইত্যাদি রোগগুলো। পিরিয়ড কে অবহেলা করতে করতে, সমস্যা লুকিয়ে রাখতে গিয়ে বেড়ে উঠে।
বাংলাদেশ এর সমস্যাটা ঠিক এই জায়গায়। লজ্জার নামে আমরা ধ্বংস ডাকি। রমযানে রোযা রাখা একজন মানুষের সামনে খাওয়া উচিৎ না। কিন্তু তাকে বলে একটা রুম খালি করে সেইখানে বসে খেয়ে নেয়া যায়। চাইলেই আব্বু অথবা ভাই প্যাড নিয়ে আসতে পারেন কিন্তু সেখানে আমরা সম্পদের পাহাড় গড়ে থাকি।
লজ্জাশীল প্রতিটা নারীর-ই হওয়া উচিত কিন্তুতাই বলে লজ্জার জন্য প্যাড ফালানোর অসুবিধা, এক প্যাড অনেকক্ষণ পড়ে থাকা ইত্যাদি সমস্যায় পড়ে থাকা লাগবে কেন? পিরিয়ড নিয়ে চিল্লাচিল্লি করতে হবে, আমার পিরিয়ড হয়েছে এইটা পৃথিবীকে জানাতে হবে এমন করার তো দরকার নেই। কিন্তু এই ব্যাপারগুলো কে নরমালাইজড করার দরকার যাতে করে কোনো বাচ্চা পিরিয়ড শব্দকে ভয় না পায়। তলপেটের অসহ্য যন্ত্রনায় যাতে তাকে মানসিক যন্ত্রনা ভোগ করতে নাহয়।
বাংলাদেশের “Sex Education” সেক্স এডুকেশন এর প্রচন্ড দরকার। পিরিয়ড সম্পর্কিত এই লজ্জা, আমাদের এই শিক্ষার অভাব ঘুচানো দরকার। পিরিয়ড খুব সামান্য নিয়মিত একটা ব্যাপার, এইটা লজ্জার নয়। নারীদের কষ্টটা যখন পুরুষ তথাকথিত সমাজ বুঝবে শ্রদ্ধাটা তখনই আসবে নাহয় এটির আনয়ন বস্তুত অসম্ভব।
লেখা: নুসরাত জাহান (অথৈ)