সাম্প্রতিক সময়ে মুড সুইং খুবই প্রচলিত একটি শব্দ। অনেকেই কথায় কথায় কটূক্তি করে বলেন, “আরে মেয়েদের মতো মুড সুইং করে তোমারও!” কিংবা ‘মেয়েদের মতো কিছু হলেই মুড সুইংয়ের দোহাই দিও না তো।” তবে এই মুড সুইং কেন হয় অথবা মুড সুইং কী, এই ব্যাপারে অনেকেই সঠিক ধারণা রাখেন না।
মুড সুইং কী?
নারীদের একটি বিশাল জনসংখ্যা মুড সুইংয়ে আক্রান্ত। ধরুন, একজন নারী হাসিমুখে কথা বলতে বলতে হঠাৎ তাঁর মন খারাপ হয়ে গেল, পরক্ষণেই আবার ঠিক হয়ে গেল, এটাকেই সংক্ষেপে মুড সুইং বলে। পিরিয়ড শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে অনেক নারীর ক্ষেত্রেই কিছু মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়, যা খুব দ্রুত বদলাতে থাকে। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট এই সময়ে অস্বস্তি, ক্রোধ, খিটখিটে মেজাজ থেকে শুরু করে মানসিকভাবে একদম ভেঙে পড়তে দেখা যেতে পারে মেয়েদের। এই লক্ষণগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় প্রি–মিনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বা পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগের সিন্ড্রোম; যা সংক্ষেপে পিএমএস (PMS) নামে বেশি পরিচিত। অনেকেই আবার মুড সুইংকে ইমোশনের ‘রোলার কোস্টার’ও বলে থাকেন।
মুড সুইং কেন হয়?
পিএমএস(PMS) বা মুড সুইংয়ের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা স্ত্রী হরমোনকেই দায়ী করে থাকেন। নারীদের পিরিয়ড সাইকেলকে কার্যক্রম অনুসারে ৩টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। যার মধ্যে শেষ পর্যায়টিতে নারী পিএমএসে আক্রান্ত হন। এরপর শুরু হয় পিরিয়ড, অর্থাৎ নতুন সাইকেল বা চক্র। মেয়েদের শরীরে থাকা স্ত্রী হরমোনের নিঃসরণ মাসের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম পরিমাণে হয়। একটা পিরিয়ড শেষ হলে প্রধান ফিমেল হরমোন ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। ১৪-১৫ দিনের মাথায় তা পৌঁছে যায় তার সর্বোচ্চ মাত্রায়। যাকে বলে ওভল্যুশন। এরপর তরতরিয়ে কমতে থাকে ইস্ট্রোজেন নিঃসরণ। আবার পরের পিরিয়ড শুরুর পর থেকে অল্প অল্প করে নিঃসরণ বাড়ে। ইস্ট্রোজেনের এই উত্থান-পতনই মেয়েদের মানসিক অবস্থায় প্রভাব ফেলে এবং পিএমএসজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে।
কিছু গবেষণায় উল্লেখ আছে, নারীবিশেষ হরমোনগুলো কিছু ব্রেইন কেমিক্যালকে কমিয়ে মুডের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সেরেটোনিন। এ বিষয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন। সেরেটোনিনের মাত্রা কমে গেলে হতাশা, বিষণ্নতা, অস্থিরতা তৈরি হয়। এ ছাড়া পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবেই একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম শারীরিক বা মানসিক লক্ষণ দেখা যায়। অনেকের ক্ষেত্রেই পেটের পেশিতে টান, খেতে অনিচ্ছা, শরীরে অস্বস্তি বা মাথাব্যাথা ইত্যাদি জানান দেয়, এবার পিরিয়ড শুরু হবে। এ জন্যও অনেকের মুড সুইং হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন আপনার পিএমএস বা মুড সুইং হচ্ছে?
হঠাৎ রেগে যাওয়া
ছোটখাটো ব্যাপারেই হঠাৎ রেগে যাওয়া, স্বাভাবিক একটা ব্যাপার মেনে নিতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া মুড সুইংয়ের অন্যতম একটি লক্ষণ।
ডিপ্রেশন বা অবসাদ
মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আপনার মন ভার হয়ে থাকলে, বিগত নানা ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে মনের অজান্তেই আপনার হতাশা সৃষ্টি হলে বুঝবেন আপনার মুড সুইং হচ্ছে। শুধু ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন নয়, সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রাও এই সময় কমে যায় বলেই, মন খারাপের এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
অবসাদগ্রস্ততা
অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, কাজে অনীহা ইত্যাদিও মুড সুইংয়ের জন্য দায়ী।
উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি
কাজ করতে করতে হঠাৎই মনে হলো আপনাকে দিয়ে কিছুই হবে না; আত্মবিশ্বাস কমে গেল নিমেষেই। দিনের বেশির ভাগ সময়েই এই উদ্বেগ তৈরি হলে এটিও পিএমএসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।
কান্নাকাটি
পিএমএসের সময় এটি আরেকটি অতি সাধারণ ঘটনা। খুবই সামান্য কারণে মন খারাপ করে তা থেকে কান্না এলে এটি মুড সুইংয়ের একটি কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।