শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করা  খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জন্য পাঠ্যপুস্তকে মাসিক সম্পর্কে সঠিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

নারীর জীবনে ঋতু বা মাসিক বিষয়টি অতি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক ঘটনা। প্রজননক্ষম মেয়ে বা নারীর মাসিকের সময়কাল প্রায় ৩৮ বছর। মাসিক সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও জ্ঞান পাওয়া, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থার অধিকার তাঁর অন্যতম মানবাধিকার। মাসিক স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামাজিক বিধি নিষেধ, বিশ্বাস বা রীতিনীতি এবং প্রচলিত ধ্যানধারণা নারীর মাসিকের সময় সামাজিক ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণকে সীমিত করে, যা নারীর সামগ্রিক ক্ষমতায়নকে বাধাগ্রস্ত করে। এ ছাড়াও পরিষ্কার পানি, উপযুক্ত স্যানিটেশন সুবিধা এবং আনুষঙ্গিক স্বাস্থ্যবান্ধব সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া নারীর মাসিক স্বাস্থ্যের ব্যবস্থাপনাকে কঠিন করে তোলে।

আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব স্যানিটারি পণ্য ও সহায়ক অন্য উপকরণ সহজলভ্য না হওয়ায় তারা ঝুঁকিপূর্ণ উপকরণ ব্যবহার করে। এসব কারণে অনেক সময় তাদের যৌন ও প্রজননতন্ত্র এবং মূত্রনালির সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা থাকে। সার্বিক অর্থে, বিশ্বের অন্য অনেক নারীর মতোই বাংলাদেশের নারীরা মাসিকের সময় শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন।

অন্যদিকে, মাসিককালীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়নের বিষয়টি পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার ছাড়াও শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতার সাথে সম্পর্কিত।

মাসিক স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে করণীয়:

পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রম পুনর্বিন্যাস এবং পাঠ্যপুস্তকে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সম্পৃক্ত যৌনশিক্ষা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তক অনুসরণ করে পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে, সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলো থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদেরকে প্রশিক্ষণের বকিল্প নইে। সেক্টর উন্নয়ন পরিকল্পনা (এসডিপি) ২০১১-২০২৫ এর নির্দেশনা অনুসারে, টয়লেট ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১৮৭-এর পরিবর্তে ১:৫০ জন করা এবং নতুন পৃথক টয়লেট তৈরি ও পরিচালনার জন্য বাজেট বরাদ্দে অবশ্যই স্কুলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। স্কুলে মাসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সহায়ক কার্যক্রম নিতে করতে উদ্বুদ্ধ করা দরকার, যা মেয়েদের স্কুলে যেতে ও বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের স্বস্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।

মাসিক স্বাস্থ্য যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যেরই একটি অংশ, তাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করা দরকার যে, মেয়ে শিশুরা এমন পরিবেশে বেড়ে উঠবে যেখানে মাসিককে স্বাস্থ্যসম্মত ও ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়। মেয়েশিশু ও নারীরা প্রথম মাসিকসহ মাসিককালে তাদের পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সহযোগিতা পায় সেটি যেন নিশ্চিত করা যায়। মাসিকের বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থাপনা যেন কিশোরী ও নারীর সামাজিক বা সাংস্কৃতিক দিক বাধাগ্রস্ত না করে, সে বিষয়টিকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।

অপরাজিতা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাসিকবান্ধব টয়লেট নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও চেষ্টা করছে, ডিগনিটি বক্স এর নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করতে।

ছবি: পলি ত্রিপুরা।